ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ , ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে বাড়ছে অবিশ্বাস দলিতদের পরিবর্তনে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ- আনু মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় অভিযানে ১৬৫ বাংলাদেশি আটক জাবির থিসিসের ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি চীনের অর্থায়নে পঞ্চগড়ে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি যশোরে আগুনে পুড়লো ফার্মের ৪৪ হাজার মুরগি ঈদের পর থেকে বাজারে সবজির দাম বাড়তি চার মাসের সন্তানকে বিক্রি করে মোবাইল কেনেন মা! মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ টিসিবির জন্য কেনা হবে ৫৪২ কোটি টাকার তেল সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৫ জন দুদকের হাতে গ্রেফতার টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলী গুম হন- রিজভী কনটেইনারবাহী জাহাজ চলবে দুই বন্দরে

আনন্দ-গান-শোভাযাত্রায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন

  • আপলোড সময় : ১৬-০৪-২০২৫ ০৩:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৪-২০২৫ ০৩:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন
আনন্দ-গান-শোভাযাত্রায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন নাচ, গান, কবিতাসহ নানা আয়োজনে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করেছে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ শিরোনামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
দেশজুড়ে আনন্দ আর গান-শোভাযাত্রায় বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ বাংলা নববর্ষ। এদিন সূর্য ওঠার পর থেকেই রাজধানী ঢাকার রাজপথ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। লাল পাঞ্জাবি পরা পুরুষ ও সাদা-লাল শাড়িতে দেখা মেলে নারীদের। গালে-হাতে আলপনা, মাথায় ফুলের টায়রা ও সাজসজ্জায় নগরীকে রঙিন করে তোলেন তরুণীরা। দিনটি ঘিরে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় বিভিন্ন মোটিফে ফুটে ওঠে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। বর্ণিল সাজে এতে অংশ নেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। অতীতের সব গ্লানি ভুলে সুখ ও সমৃদ্ধির কামনা করেন তারা। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, ঢাকার মতো সারা দেশে উৎসব-উদ্দীপনায় বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। এদিন জেলায় জেলায় বিভিন্ন প্রাঙ্গণে বসেছে মেলা। নাগরদোলা, বায়স্কোপ, পুতুল নাচের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কোনো কোনো মেলায়। কোথাও আবার শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কণসহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে নতুন বছরকে ঘিরে দেশজুড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইতে দেখা গেছে। গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মূল আয়োজন শুরু হয়। এতে নানা বয়স, শ্রেণি, পেশা ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ প্রভাতেই দলবেঁধে রঙিন পোশাক পরে চারুকলা অনুষদের এ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যুক্ত হয়েছে ঘোড়দৌড় প্রদর্শনী, সুলতানি ও মোগল আমলের মুখোশ, ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র, ইলিশ মাছ, ৩৬ শে জুলাই-এর প্রতীকী চিত্র ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নতুন নানান মোটিফ। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে এবারো নববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে বেরিয়েছে শোভাযাত্রা। বিগত বছরের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ এবার নাম বদলে হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। গত সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘?নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। তিনি এ শোভাযাত্রাকে সর্ববৃহৎ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ আনন্দ শোভাযাত্রা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ?এবারের আনন্দ শোভাযাত্রায় অনেক বাধা-বিপত্তি ছিল, অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সবার সহযোগিতায় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ আয়োজন সফল হয়েছে। এবার নৃগোষ্ঠীদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ আমাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল তার একটি ছিল এটি। এবার সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ এবং সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চারুকলা অনুষদের সামনে এসে শেষ হয়। বৈশাখ উদযাপনে এবারের শোভাযাত্রায় মূল মোটিফ ছিল ‘?স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’। এছাড়া সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি ও সাতটি ছোট মোটিফসহ মোট ২১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। শোভাযাত্রায় পায়রা, মাছ, বাঘ এবং জুলাই বিপ্লবে নিহত মুগ্ধর ‘?পানির বোতল’-এর শিল্পরূপও প্রদর্শিত হয়। বিভিন্ন প্রতীক, চিত্রকর্মের মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষিয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, সাধারণ মানুষ, ফুটবলার, অভিনয়শিল্পীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এবার মারমা, ম্রো, চাকমা, বম, খুমি, ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মণিপুরি, খাসিয়া, চাসহ ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া বিদেশী নাগরিকরাও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সম্প্রীতি ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। শোভাযাত্রায় রঙিন পোস্টার, প্ল্যাকার্ডসহ ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায় হাজির হন তারা। হাজারো মানুষ নেচেগেয়ে বর্ষবরণের আনন্দে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এদিন সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, সড়কে ঢল নামে মানুষের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতি ভেদাভেদ ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রঙিন পোশাকে শোভাযাত্রায় হাজির হয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফলে বৈশাখের আয়োজন রূপ নেয় বর্ণাঢ্য মহোৎসবে। এবারের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতদের স্মরণে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতীকী মোটিফ ব্যবহৃত হয়। বর্ষবরণে অংশ নেয় পুলিশও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অশ্বারোহী দল শোভাযাত্রার ১৮টি ঘোড়া নিয়ে অংশ নেয়, যা শোভাযাত্রার আকর্ষণ বাড়িয়েছে। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আসলে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর নয়, এটাকে আমরা অনেকদিন বাঙালির প্রাণের উৎসব বানিয়ে রেখেছি। এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারোসহ সব জাতিগোষ্ঠী বর্ষবরণ পালন করে। তিনি আরো বলেন, এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। ঐতিহাসিকভাবে এটিকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গ্রুপ তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করেছে। আমরা এবার ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করেছি, কারণ ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়, ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি। তবে এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি রয়েছে। বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠী, সেই আকবরি, সুলতানি আমলের ঐতিহ্য এবং তার পরবর্তী ঐতিহ্যের মিশ্রণ এখানে দেখবেন। তবে টিপিক্যাল রাজনীতির কিছু এখানে নেই। প্রতিবারের মতো এবারো রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি এ’, ‘?তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী’, ‘?ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’, ‘সকল কলুষতামসহর, জয় হোক’, ‘?তোর ভিতরে জাগিয়া কে যে’, ‘?জগতের নাথ করো পার হে’, ‘?মোরা সত্যের ’পরে মন’, ‘?আজি নূতন রতনে’, ‘?গগনে প্রলয় মেঘের মেলা’সহ নানা গান আর সুরের মূর্ছনায় নতুন বছরকে বরণ করে নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে নিহত মানুষদের। তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছায়ানটের প্রয়াত সভাপতি কিংবদন্তিতুল্য সন্?জীদা খাতুনের মৃত্যুর পর এবার নববর্ষ কথন পাঠ করে শোনান নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, ‘মুক্তির অন্বেষায় দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধশতবর্ষ পূর্বে বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংগীতসহ সব মাধ্যম এবং বিভিন্ন স্থাপনায়। ‘বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ অসাম্প্রদায়িক উৎসব, নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার আয়োজন। আমরা এক আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখি, যে দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে, গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ।’ বাঙালির মানবতার মুক্তিসাধনা স্বাধীন আপন দেশেও প্রত্যাশা ও আশাভঙ্গের নানান চড়াই-উতরাইয়ের দোলাচল প্রত্যক্ষ করেছে। নববর্ষের ঊষালগ্নে, আজ চোখ ফেলি হিসাবনিকাশের হালখাতায়। একদিকে মুক্তির জন- আকাক্সক্ষা অর্জনের প্রত্যাশা, অন্যদিকে পীড়াদায়ক বিদ্বেষ-বিভক্তি, নারী-শিশুর অমানবিক মর্যাদাহানি ও অপরিণামদর্শী অসহিষ্ণুতা। সব অতৃপ্তি প্রতিবিধানের দায় রাষ্ট্রের, তবে সমাজকেও সে দায় নিতে হয় বৈকি। সবাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে, মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই। শুধু ছায়ানট নয়, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে বেজে উঠেছিল সুর। সকাল থেকে গানে গানে নতুন বছরকে বরণ করে নেন শিল্পীরা। পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকগীতিসহ পঞ্চকবির গান। রবীন্দ্রনাথের ‘?আলো আমার আলো ওগো, আলো ভুবন ভরা’, কাজী নজরুলের ‘?প্রভাত বীণা তব বাজে’, ‘?আমাদের দেশ হীরা-মানিক, সোনা, রুপায় ভরা’ নানা সংগীতে নেচেগেয়ে দিনটি উদযাপিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা বটমূল ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন প্রাঙ্গণ সেজেছিল বৈশাখী সাজে। লাল-নীল, সাদা-হলুদ রঙের পোশাকে এদিন বের হয়েছিল রাজধানীবাসী। সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে ছিল নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজন। রাজধানীর রমনা পার্ক, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্ক, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ভিড় করে মানুষ। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও দিবসটি উদযাপন করেন। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের সিআরবি, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেটসহ সব জেলা-উপজেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত কয়েকটি দেশে উদযাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষবরণে শামিল হয়েছেন কারাবন্দিরাও। পান্তা-ইলিশে সকাল শুরুর পর দিনভর তাদের জন্য রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। দুপুরে উন্নত খাবারের পাশাপাশি বন্দিদের অংশগ্রহণে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোভাযাত্রা, ছোট পরিসরে বৈশাখী মেলাসহ বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজনদের আপ্যায়নসহ নানান আয়োজনে বর্ষবরণ করছে দেশের কারাগারগুলো। এবারের ‘?বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে র?্যাব ও পুলিশের কড়া পাহারা ছিল। পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশবাসীকে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পহেলা বৈশাখ সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আজকে সবাইকে আপন করে নেয়ার দিন। এবারের নববর্ষ, নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। আসুন, আমরা বিগত বছরগুলির গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। চলুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় এবং তাকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এসব ঐতিহ্য শুধু যেন নিজেদের মধ্যেই না থাকে, আমাদের সংস্কৃতি যেন আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি বিশ্ব দরবারে। বছরের এই দিনটিতে আমরা সুযোগ পাই উৎসবমুখর পরিবেশে আমাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্ম ও পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। পুরো পৃথিবীতে যেখানে যেখানে বাঙালিরা আছেন আজ আমাদের সবার আনন্দের দিন, বর্ষ বরণের দিন। ‘ফসলি সন’ এর ইতিহাস তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলা সাল গণনা শুরু হয়েছিল কৃষিকাজের সুবিধার জন্য, ‘ফসলি সন’ হিসেবে। এখনো এদেশের কৃষকরা বাংলা তারিখের হিসেবেই বীজ বোনেন, ফসল তোলেন। ‘হালখাতা’কে বাংলা নববর্ষের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখনকার আধুনিক সময়েও অনেকেই এই হালখাতার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন বাংলাদেশের হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে। নববর্ষের বৈশাখী মেলায় বাংলাদেশের জেলায় জেলায় উদ্যোক্তারা সারা দেশে ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হাত পাখা ইত্যাদি তৈরি করে নিজেদের সৃজনশীলতাকে তুলে ধরেন এই দিনকে উপলক্ষ্য করে। তিনি আরও বলেন, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষে এবার বড় পরিসরে উৎসব উদ্?যাপন করছে। দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের সবার জন্য শুভদিনের সূচনা করুক। নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের সকলের জন্য নতুন ও গভীর আনন্দের উন্মোচন করুক, এই কামনা করছি। তিনি নববর্ষের সকল আয়োজন ও উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন। বর্ণিল আয়োজনে নববর্ষ উদযাপন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের: বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবন বর্ণিল সাজে সাজানোসহ আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার মোয়া, মুড়কি, কদমা, বাতাসা ও মুড়লি পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচির (আলোর ইশকুল, কলেজ কর্মসূচি ও পাঠচক্রের) সদস্যবৃন্দের অংশগ্রহণে কবিতা, গান, নাটক, বাঁশি ও দলীয় সংগীত। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ দেশের বিভিন্ন অঙ্গণের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাঠচক্রের সদস্য রুকসানা মিলি ও সাকিব চৌধুরী।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স